Tafseer Ibn Kachir - Islamic Foundation Bangladesh

তাফসীরে ইবনে কাসীর - ইফাবা Screenshot
তাফসীরে ইবনে কাসীর - ইফাবা Screenshot
তাফসীরে ইবনে কাসীর - ইফাবা Screenshot
তাফসীরে ইবনে কাসীর - ইফাবা Screenshot
তাফসীরে ইবনে কাসীর - ইফাবা Screenshot
তাফসীরে ইবনে কাসীর - ইফাবা Screenshot
Update
Mar 27, 2023
Installs
10,000+
Rate
0
ইমাম ইবনে কাছীরের শ্রেষ্ঠতম কীর্তি হইল তাফসীরুল কুরআনিল করীম'। উহাই তাফসীরে ইবনে কাছীর' নামে জগজ্জোড়া খ্যাতি লাভ করিয়াছে। ইহার প্রতি খণ্ডের পাতায় পাতায় লেখকের কঠোর পরিশ্রম, গভীর অনুসন্ধিৎসা, ব্যাপক অধ্যয়ন ও অগাধ পাণ্ডিত্যের ছাপ বিদ্যমান।

আল্লামা সুয়ূতী বলেন- এই ধরনের তাফসীর আজ পর্যন্ত অন্য কেহ লিপিবদ্ধ করেন নাই । রিওয়ায়েত ভিত্তিক তাফসীরসমূহের মধ্যে ইহাই সর্বাধিক কল্যাণপ্রদ ও উপকারী। মূলত তাফসীরে ইবনে কাছীর ইমাম ইবনে কাছীরের এক অমর ও অবিস্মরণীয় অবদান। প্রাথমিক যুগে রচিত তাফসীর গ্রন্থসমূহের অধিকাংশই কালের গর্ভে বিলীন হইয়া গিয়াছে। কোন কোন তাফসীর গ্রন্থ পাণ্ডুলিপি আকারেই হয়ত কোন লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত রহিয়াছে। যে সকল গুরুত্বপূর্ণ তাফসীর গ্রন্থাকারে আলোর মুখ দেখিয়া কালোত্তীর্ণ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করিয়াছে, তাফসীরে ইবনে কাছীর তন্মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয়তার দাবীদার। মানুকূলাত তথা রিওয়ায়েতভিত্তিক তাফসীরসমূহের মধ্যে তাফসীরে ইবনে কাছীরই সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য তাফসীর ।

এই ধারায় পূর্বে রচিত তাফসীরে তাবারী ও তাফসীরে কুরতুবী ইত্যাদির বিশিষ্ট দিকগুলির ইহাতে সমাবেশ ঘটিয়াছে। পরন্তু সেই সব তাফসীরের দুর্বল দিকগুলি ইহাতে পরিশীলিত ও বিশুদ্ধ হইয়া আত্মপ্রকাশ করিয়াছে। অপূর্ব রচনাশৈলী, বর্ণনার লালিত্য ও অকাট্য দলীল প্রমাণ প্রয়োগে অসাধারণ পাণ্ডিত্য প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ইহা পূর্ববর্তী তাফসীরের চাইতেও এক ধাপ আগাইয়া গিয়াছে। হাদীসের সনদ ও মতনের সার্বিক ও যথাযথ বিশ্লেষণ ইহাকে অত্যধিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করিয়াছে। কুরআন পাকের জটিল ও দুর্বোধ্য অংশগুলির বিশদ ব্যাখ্যা ও বিভিন্নার্থক শব্দসমষ্টির আভিধানিক ও পারিভাষিক বিশ্লেষণ ইহাকে সুসমৃদ্ধ করিয়াছে। বিশেষত বিভিন্ন ভ্রান্ত ও আজগুবী মতামত দলীল প্রমাণের ক্ষুরধার তরবারি দ্বারা খণ্ড-বিখণ্ড করিয়া যেভাবে ইহাতে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা হইয়াছে, তাহা সত্যই বিস্ময়কর। মোটকথা, ইহা বিদআত ও বিভ্রান্তির বেড়াজালমুক্ত কুরআন সুন্নাহর এক অত্যুজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হইয়া দেখা দিয়াছে।

ইমাম ইবনে কাছীর তাঁহার পাণ্ডিত্য বিমণ্ডিত এই তাফসীরে কোথাও দুরূহতা বা জটিলতাকে প্রশ্রয় দেন নাই। বর্ণনার পারিপাট্য, ভাষার স্বচ্ছ-সাবলীলতা ও শাব্দিক প্রাঞ্জলতা তাহার তাফসীরকে অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও গতিময় করিয়াছে । যে কোন বিতর্কমূলক বিষয়ে তিনি বৈজ্ঞানিক নিরাসক্তি ও ঐতিহাসিক নির্লিপ্ততা বজায় রাখিয়া নিজ অভিমত পেশ করিয়াছেন। তিনি যাহা কিছুই বলিয়াছেন, কুরআন হাদীসের অকাট্য দলীল প্রমাণের ভিত্তিতে বলিয়াছেন, কোথাও নিজের ভাবাবেগকে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেন নাই। ঠিক এই কারণেই তিনি তাঁহার তাফসীরে ইবনে জারীর তাবারীর তাফসীরের ইসরাঈলী আজগুবী কাহিনী ও জাল হাদীস ভিত্তিক অলীক উপাখ্যানসমূহ প্রত্যাখ্যান করিয়া বিশুদ্ধ হাদীসের আলোকে নির্ভরযোগ্য ঘটনার সমাবেশ ঘটাইয়াছেন। তাই তাহার তাফসীরকে ন্যায়সঙ্গতভাবেই তাফসীরে সলফী নামে আখ্যায়িত করা হয়।

তাফসীরে ইবনে কাছীরের প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, ইহাতে কুরআনের তাফসীর করিতে প্রথমে কুরআন ব্যবহার করা হইয়াছ। তারপর রাসূলের হাদীস, অতঃপর সাহাবার আছার ও পরিশেষে তাবেঈনের আকওয়াল ব্যবহৃত হইয়াছে। হাদীস ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বর্ণনার সূত্র, বর্ণনাকারীর চরিত্র ও হাদীসের স্তর ও শ্রেণীভেদের প্রতিটি দিক ইহাতে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষিত হইয়াছে । আছার ও আকওয়ালের প্রয়োগ ক্ষেত্রেও উহা সত্যাসত্যের কষ্টিপাথরে ভালভাবে যাচ-পরতাল করিয়া লওয়া হইয়াছে। মোটকথা, তাফসীরটিকে সত্যের মানদণ্ড হিসাবে দাঁড় করাইতে যত রকমের সতর্কতা ও সযত্ন প্রয়াস প্রয়োজন তাহা সবই করা হইয়াছে। ইহার ফলেই তাফসীর জগতের এই অনন্য নির্ভরযোগ্য অমর সৃষ্টির আত্মপ্রকাশ সম্ভব হইয়াছে।

তাফসীরে ইবনে কাছীরকে ‘উম্মুত তাফাসীর’ বা ‘তাফসীর জননী' বলা হয়। মূলত পরবর্তীকালের সকল নির্ভরযোগ্য তাফসীর এই তাফসীর হইতেই জন্ম নিয়াছে। এই তাফসীর মুসলিম মিল্লাতের যে অপরিমেয় কল্যাণ সাধন বরিয়াছে, গ্রন্থ জগতে তাহার তুলনা সত্যিই বিরল। সত্যের শাণিত তরবারি দিয়া ইমাম ইন কাছীর পূর্ববর্তী তাফসীরসমূহের ইসরাঈলী কাহিনী ও জাল হাদীসের জঞ্জালগুলি কচুকাটা করিয়া মুসলিম মিল্লাতকে মহান কুরআনের এক নির্ভেজাল ভাষ্য উপহার দিয়া গিয়াছেন।

ইমাম ইবনে কাছীরের এই জগজ্জোড়া আলোড়ন সৃষ্টিকারী তাফসীর ও শুধু বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হইয়াছে তাহা নহে, পরন্তু ইহার বিভিন্ন সংক্ষিপ্ত সংস্করণও বাহির হইয়াছে। আরবী ভাষায় ইহার সংক্ষিপ্ত সংস্করণ তৈরি করেন শায়খ মুহাম্মদ আলী আস্ সায়ূনী। বৈরুতের ‘দারুল কুরআনিল করীম' প্রকাশনা হইতে তিন খণ্ডে উহা অত্যন্ত সুন্দরভাবে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। উর্দুতে উহার সংক্ষিপ্তসার অনূদিত হয় এবং উর্দু অনুবাদে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন মাওলানা মুহাম্মদ জুনাগড়ী।